পরিবেশটা আসলে কী? আমরা সবাই জানি, আমাদের আশেপাশের সবকিছু নিয়েই পরিবেশ গঠিত। প্রতিবছর ৫ জুন “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। চলুন এখন আমরা একটু ঘুরে আসি অতীতে এবং দেখে আসি কিভাবে এই দিনটি বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে:
জীব সম্পদের মানবকল্যাণমুখী গুরুত্ব ও পৃথিবীর স্থায়িত্ব রক্ষায় ওদের ভূমিকার কথা অনুধাবন করে পৃথিবীর সকল দেশ ১৯৯২ সালের ৫ জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো-তে মিলিত হয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও গবেষণায় একমত হয়েছেন। পরিবেশ বিষয়ক এ সম্মেলন Earth Summit বা ধরিত্রী সম্মেলন নামে পরিচিত। এটি ছিল জাতিসংঘের বৃহত্তম সম্মেলন। এ সম্মেলনে Agenda 21: Earth’s Action Plan শীর্ষক দলিলে সর্বসম্মতি দান ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। Agenda 21 এ পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক অনেক বিষয় উল্লেখিত হয়েছিল। এ কারণে জাতিসংঘ ৫ জুনকে “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হিসেবে পালনের ঘোষণা করে।
এতক্ষণ আমরা জানলাম “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” এর পটভূমি। এ বছর এ দিবসটি “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা: তোমার পৃথিবী, তোমাকেই চায়” এই স্লোগানে দিবসটি পালিত হচ্ছে। আসুন এখন বতর্মান পরিস্থিতির দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি:
বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রীন হাউস ইফেক্ট, ওজোন স্তরের ক্ষয়, বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মরুকরণ, খরা ও বনাঞ্চলের পরিমান হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে আজ আমরা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্রতিবছর সিডর ও আইলার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যার প্রকোপ, মরুকরণ এসব আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে ভবিষ্যতের ভয়াবহ পরিণামের কথা। এজন্য এসব বিষয় নিয়ে খুব দ্রুত ভাবতে হবে। এখন কিছু বিষয়ে দৃষ্টিপাত করি:
# বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বরফ দ্রুত গলছে। যার পরিণামে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুততার সাথে। এই বৈশ্বিক উষ্ণতার পেছনে অন্যতম কারণ গ্রীন হাউস ইফেক্ট। যা ওজোন স্তরের ক্ষতি করছে। আর এ সবকিছুর পেছনে মূলত দায়ী আমরা মানব জাতি। আমরা নিজেরাই নিজেদের কি পরিমাণ ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছি তা আমরা নিজেরাই বলতে পারিনা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে অবশ্যই আমরা, কিন্তু সেই প্রযুক্তি অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব হতে হবে।
# আমরা ব্যবসার জন্য গাছপালা কেটে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছি। কিন্তু এই গাছের পরিবর্তে আর একটি নতুন গাছ আমরা লাগাইনা। এই অনীহার কারণে আমরা প্রকৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধ্বংস করছি… তা কি আমরা জানি? গাছই আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং প্রকৃতির কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান কমিয়ে দেয়। এখন আমরা প্রতিনিয়ত কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করাছি, কিন্তু অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষেত্র ধ্বংস করছি। ভেবে দেখেছি কি, এর পরিণাম কি হবে?
# নগরায়ন এব শহরায়নের নামে আমরা বনাঞ্চল কেটে ঘরবাড়ি বানাচ্ছি, যার ফলে বিচিত্র ধরণের পশুপাখির অভয়ারণ্য এই পৃথিবীর জায়গা ছোট হয়ে যাচ্ছে এই পশুপাখির জন্য। যার পরিণাম আমরা ভেবে দেখিনা।ফলে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন। প্রতিনিয়তই বিলুপ্ত হচ্ছে কোন না কোন প্রজাতি।
এরকম আরও অনেক যুক্তি দেয়া যায়। তবে এজন্য আমরা দায়ী অনেককেই করতে পারি। কিন্তু অন্যকে দায়ী না করে আমরা নিজেরা একটু সচেতন হই পরিবেশ রক্ষায়। আমরা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করছিনা, বরং তার সাথে নিজেদের অনাগত ভবিষ্যতকেও ধ্বংস করছি। তাই আসুন আমরা আমাদের পরিবেশকে বাঁচাই এবং নিজেদেরকেও বাঁচাই। আমরা একটু সচেতন হই নিম্মোক্ত বিষয়ে:
>> বৃক্ষনিধন না করে বৃক্ষরোপন করি,
>> যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে দুর্গন্ধ করব না,
>> ধূমপান করে নিজের ক্ষতি করবনা, সাথে অন্যের ক্ষতিও করব না,
>> পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী হব।
…… আমাদের আশেপাশের সবকিছুকে পরিচ্ছন্ন রাখলে পরিবেশও সুস্থ থাকবে। অন্যের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপানোর আগে নিজে সচেতন হই। পরিবেশ দিবসের স্লোগানের সাথে সাথে আমরাও বলি, “তোমার পৃথিবী তোমাকেই চায়।” অর্থাৎ আমাদের পৃথিবী আমাদেরকেই চায়।
প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো ব্লগ
সময়কাল: ০৫ জুন, ২০০৯