মানুষ চিন্তাশীল এবং নতুনত্বের খোঁজে এবং অন্বেষণের পথে চিরকাল ধাবমান। এই পরিবর্তনশীলতার পথে আমরা বাংলাদেশীরাও এগিয়ে চলছি। যেহেতু আমি একজন মানুষ, তাই হাজারো চিন্তা এসে ভিড় করে আমার মাথায়। তেমনি একটি চিন্তা আমার মাথায় এসে একদিন টোকা দিল। আমি এর আগে কখনো রাজনীতি বিষয়ক লেখা লিখিনি এবং লিখতে চাইওনা। কিন্তু আজ যে লেখাটি লিখেছি, সেটি আমার মনে সাড়া দেওয়াতে লিখলাম। এজন্যই আপনাদের সাথে কথাগুলো শেয়ার করা। এটি আসলে রাজনীতি বিষয়ক লেখা নয়, তবে রাজনীতিকে প্রেক্ষিত করে লেখা।
বাংলাদেশে যেকোন গুরুত্বপূর্ণ পেশাতে চাকরি পাওয়ার জন্য, যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য সকলকে নির্বাচনী বা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাদের যোগ্যতা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানে, একটি মাত্র পেশায় কোন ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোন ধরণের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়না। আর সেই মহান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মহান পেশা হচ্ছে রাজনীতিবিদ। আর এজন্যই দেখা যাচ্ছে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা, দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া, সন্ত্রাস, সবোর্পরি অনুন্নত দেশ হওয়ার তকমা নিয়ে বিদেশীদের সকল আদেশ মাথা পেতে নেয়ার লজ্জা, বিদেশীদের কথা মতো পুতুল নাচ নাচা।
আফসোস! এসব আফসোসের কথা না বলে আমাদের নতুন কিছু উপায় উদ্ভাবনের চিন্তা করতে হবে। এখন আসা যাক, নতুন কিছু কি হতে পারে? আসুন আমরা দেখিঃ-
— প্রতিটি রাজনীতিবিদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা(এইচ.এস.সি) থাকতে হবে।
— রাজনীতিবিদ হবার জন্য তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে এই পরীক্ষা সাধারণ নির্বাচনী পরীক্ষার মত কোন পরীক্ষা হবেনা।
এখানেই এসে আমার নতুন চিন্তার আবির্ভাব। এই পরীক্ষার পরীক্ষক হবেন মনোবিজ্ঞানীগণ। এই মনোবিজ্ঞানীরা তাদের হিপনোটাইজ করে অথবা বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের মনমানসিকতার পরীক্ষা নিবেন। তারা দেখবেন তিনি কি দেশপ্রেমিক কিনা, তিনি কি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সৎ, নাকি অসৎ; অপরের সাথে তাদের ব্যবহার কেমন এইসব। আর লিখিত পরীক্ষায় তাদের খানিকটা আইকিউ টেস্ট করা হবে। যেমনটি সামরিক বাহিনীর পরীক্ষায় করা হয়ে থাকে। যেহেতু রাজনীতিবিদগণ দেশ পরিচালনার মত গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রার্থী, তাই আমি মনে করি তাদের অবশ্যই এ ধরণের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা জরুরি। এবার আপনারা বলতে পারেন, সবক্ষেত্রে যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে, এটা তো মামুলি ব্যাপার। আর বেশিরভাগ মানুষই তো কোন না কোন দলকে সাপোর্ট করে। তাহলে তো এখানে দুর্নীতি ঠেকায় কে! এক্ষেত্রে আমি বলব, যেকোন পরীক্ষাতেই তো এধরণের যুক্তি খাটে। কিন্তু কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া এগুলো তো সফলই হয়। আর এই পরীক্ষা কয়েকদিন ব্যাপী হবে। যার ফলে চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ করা হবে সব পরীক্ষার্থীকে।
আরও বলতে পারেন, এরকম পরীক্ষা নিয়ে কি তাদের আসলেই রাজনীতিবিদ হিসেবে তৈরি করা যাবে? এবার তাহলে আমি প্রশ্ন করি, যারা ডাক্তার, ইণ্জিনিয়ার, ম্যাজিস্ট্রেট, সচিব, আর্মি অফিসার.. তারা কি শুরু থেকেই ডাক্তার, ইণ্জিনিয়ার,আর্মি অফিসার ছিলেন নাকি? নিশ্চয় তাদের সেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে- পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর, সেখানে জয়েন করার পর। তাই নয় কি? তাছাড়া তারা তো রাজনীতিবিদ হবার জন্যই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। আর এ ধরণের গ্রহণযোগ্যভাবে পরীক্ষা নিলে ট্যালেন্টেডরা অবশ্যই আগ্রহী হবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। আর আমাদের পুরানো চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নতুনত্বের দিকে অগ্রসর হবার জন্যই তো আমার এই লেখা।
এবার বলতে পারেন, আসলেই এভাবে সঠিক রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে? এবার আমি বলি, ডাক্তার, ইণ্জিনিয়ার,আর্মি অফিসার বা সরকারি কর্মকর্তা যারা হয়েছেন, তারা সবাই কি ব্যর্থ, অথবা তারা সবাই কি সফল? আপনি ১০০% সফলতা পাবেন না এটা ঠিক, তবে ৮০-৯০% সফলতা পেতে দোষ কি?
আমাদের দেশে ট্যালেন্ট এর অভাব নেই, কিন্তু অভাব হচ্ছে এই ট্যালেন্টকে কাজে লাগানোর সুযোগের অভাব। বর্তমানে যে সকল রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে আছে, সেসব দলেও ট্যালেন্টেড রাজনীতিবিদ আছে, কিন্তু তারা সেই সুযোগকে কখনোই কাজে লাগিয়ে নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ পায়না।
আমাদের দেশে আজ সঠিক নেতৃত্বের বড়ই অভাব। আমাদের দেশে আমরা দেখতে চাই মাহাতির মোহাম্মদ এর মত যোগ্য নেতৃত্বের। যিনি আমাদের শুধু স্বপ্নই দেখাবেন না, স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেও দেখাবেন। যিনি আমাদের আকাশ ছোঁয়ার উপযোগী করবেন। আমরা সেদিনের প্রত্যাশায়…………….।
বি:দ্র: এই লেখাটি আমি কাউকে আঘাত করার জন্য লিখিনি। আমি শুধুমাত্র আমার চিন্তাশীল মস্তিষ্কের কথাই তুলে ধরলাম। আর আমার লেখাটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তাও আমি মনে করিনা। তবে নতুনত্বের চিন্তায় আমি অবশ্যই আমার লেখাকে প্রাধান্য দিব।
লেখার সময়কালঃ ০৮ জুন ২০০৯
প্রথম প্রকাশঃ প্রথম-আলো ব্লগ