ঈদ মোবারক – আমার ঈদ – ডায়েরি

ঈদ মোবারক — আমার নিজের ওয়েবসাইটের জন্য এটাই আমার প্রথম লেখা। এর আগে আমার পুরাতন কিছু লেখা একত্রিত করে ওয়েবসাইটের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিলাম। আর এই লেখা দিয়েই আমার নিজের ব্লগে লেখালেখির যাত্রা শুরু করলাম। :) ঈদের দিনে নিজের ওয়েবসাইট চালু করতে পেরে বেশ আনন্দই লাগছে।

ঈদ — আজ ঈদ-উল-ফিতর। মহা খুশির এবং আনন্দের একটা দিন। ঈদের নামায শেষে বেরিয়ে দেখি রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড়, মানুষজন একে অপরের সাথে কোলাকুলি করছে। ব্যাপারটা দেখতেই ভালো লাগে। যদিও মাঝে মাঝে কিছু বজ্জাত পোলাপাইন বাজি ফুটিয়ে বিরক্তি তৈরি করছে। এটা বাদে সবকিছুই ভালো লাগছে। সারা বছর ধরে রোযার ঈদ এবং কোরবানীর ঈদ – এ দু’টো ঈদের জন্য আমরা অধীর অপেক্ষায় বসে থাকি। কেউ হয়তো আনন্দ করি ঈদের দিন, কেউ করি ঈদের পরের দিন বা তারও পরের দিন। মোদ্দা কথা, ঈদ নিয়ে আসে আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা, যা আমাদের ব্যস্ত জীবনে খানিকটা হলেও প্রশান্তি নিয়ে আসে।

Eid Mubarak -2014

আজকের দিনটা যদিও শুরু হয়েছে আব্বুর বকা খেয়ে; ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়াতে খেয়েছি বকা। তবে ঈদের নামায পড়ে এসে আব্বু-আম্মুকে পা ধরে সালাম করে আমার মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে। সাধারণত আব্বু-আম্মুকে খুব কম সময়ই সালাম করার সুযোগ হয়, সুযোগ পেলেও সেটা কাজে লাগানো হয়ে উঠেনা।

এককালে ঈদগাহে যেয়ে ঈদের নামায পড়তে না পারলে সেই ঈদকে আর ঈদ বলে মনে হতনা। কিন্তু এখন আগেকার ফিলিংস অনেক কমে গেছে। তারপরও ঈদগাহে নামায পড়ার মাঝে অন্যরকম একটা ঈদ ঈদ অনুভূত হয়। এবারে অবশ্য বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়ে যাওয়াতে ঈদগাহে নামায পড়া হয়নি। এলাকার মসজিদে ঈদের নামায আদায় করেছি।

সাধারণত ঈদের সময় আমার বেশিরভাগ সময় কাটে আমার মেজ জেঠার বাসায় ( যেটাকে আমরা পুরান বাসা বলে সম্বোধন করে থাকি। “পুরান বাসা” নামকরণের পেছনে কাহিনী আছে। সেটা না হয় আরেকদিন বলবো। ) ঈদের নামায পড়ে হয় পুরান বাসায় চলে যাই, অথবা আমার কাজিনরা এসে আমাকে নিয়ে যায়। তখন একসাথে ঘুরতে বের হই। এবার অবশ্য বাসায় এসে আর বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। আবার এদিকে আমার কাজিনরাও নামায শেষে ঘুম দিয়েছে। তবে শেষ-মেশ দুপুর ১২:৩০ এর দিকে আমার বাসায় পিচ্চি-কাচ্চা নিয়ে আমার কাজিন মাসুদ ভাই হাজির হলো। নইলে ঈদের দিনটা অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই হয়ে যেত। পরে বিকালে  আবার এসব পিচ্চি-কাচ্চা-বাচ্চাদের নিয়ে ফেনীর বিজয়সিংহ দীঘির পাশ ঘেঁষে নতুন শিশু পার্ক গোল্ডেন শিশু পার্কে ঘুরতে গেলাম। রাইড মাত্র আছে ৩টা। তার উপরে রাইডের দামও সেইরকম। আর রাইডগুলো কেমন? থাক, আর কিছু বললাম না। বুঝে নেন! তবে অবশ্য ফেনীর এককালের রাজাঝীর দীঘির পাশের একমাত্র শিশু পার্কের চাইতে ঢের উন্নত। :v

যাই হোক, সব মিলিয়ে ঈদের দিনটা ঘুরাঘুরি করে ভালোই কেটেছে। কিন্তু তবুও অপূর্ণতা রয়ে যায়। এখনকার ঈদের ঘুরাঘুরি গুলো একদম পানসে। আগে চাচা-জেঠারা মিলে ঘুরতাম। বিভিন্ন মুরুব্বীদের বাসায় বাপ-চাচারা সহ দলবেঁধে একসাথে ঘুরতে যেতাম। এখন আর সেই দিন নেই। সত্যি কথা বলতে কি এরকম ভালো লাগেনা। ঈদের মজার কথা ভাবলে সত্যি সত্যি ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে খুব। বড় হয়ে ঈদগুলো একদম কাটখোট্টা-পানসে টাইপ হয়ে গেছে। ছোটবেলায় ঈদ মানেই সেলামি পাওয়া, নতুন জামা-কাপড় উপহার হিসেবে পাওয়া, কাজিনরা সবাই মিলে একসাথে ঘুরতে বের হওয়া — সবকিছুই ভীষণ ভীষণ মিস করি। বিশেষ করে আমার জীবনের বিগত ৫-৬ বছর ধরে ঈদগুলো একদম পানসে কেটেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে ঈদগুলো আবার বর্ণিল হয়ে উঠবে।

 

তবে শুধু আক্ষেপ দিয়েই এবারের ঈদের কথা শেষ করবো না। এবারের রমযান এবং ঈদ-উল-ফিতর দু’টোই আমার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে খুব ভালো কেটেছে। সে হিসেবে বলতে গেলে এক কথায় অসাধারণ কেটেছে। ঈদে আম্মুর থেকে পেয়েছি খুবই আকর্ষণীয় একটা গিফট। আর সেটা হচ্ছে আমার এই ওয়েবসাইট। :D

আমার আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করছিল এবার ঈদে আমার কি লাগবে?

আমি বলে বসলাম, আমার একটা ডোমেইন লাগবে, নিজের জন্য একটা ওয়েবসাইট বানাবো। আম্মু তাই এবারের ঈদে আমাকে এই ওয়েবসাইটের খরচপাতি ঈদী হিসেবে দিল। :D

আর রমযান? আমার সারাজীবনের হিসাব মিলালে এবারের রমযান আমার জন্য একেবারেই অন্যরকম ছিল। ভার্সিটিতে উঠার পরে জীবনে প্রথম ইফতার পার্টিতে দাওয়াত দেওয়া ও পাওয়া দু’টোর সাথেই পরিচিত হয়েছিলাম।  তার আগে কখনো ইফতার পার্টিতে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি।

এই রমযানে একটা নয়, দু’টো নয়, তিন-তিনটা ইফতার পার্টির দেখা পেলাম!! তাছাড়াও এক বন্ধুর বাসায় ইফতারির দাওয়াতও পেয়েছি। সব মিলিয়ে এবারের রমযান এবং ঈদ বেশ ভালোই কেটেছে।

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.