ধরা যাক, আমার শহরে বিরাট এক মিষ্টি ব্যবসায়ী আছেন – শ্রীমান বিলমদন ঘোষাল। মিষ্টি ব্যবসা করে তিনি প্রভূত অর্থের মালিক হয়েছেন, তার নামে অনেক দাতব্য সংস্থাও আছে। উনার মূল প্রতিষ্ঠান মাইক্রোমিষ্টান্ন ভান্ডারের সুনাম চারিদিকে, শহরের ৮০% লোকই উনার দোকানের মিষ্টি কেনে। উনি চড়া দাম যেমন রাখেন, আবার জিনিসও দেন প্রিমিয়াম মানের। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ মাইক্রোর মিষ্টিতে সহজে পোকামাকড় ধরে যায়, বেশিদিন ফেলে রাখা যায়না এই ধরণের অভিযোগ করে বটে, কিন্তু জিনিসটা বেসিক্যালী ভালোই।
আবার ধরি, আমাদের শহরে আছেন আরেক মিষ্টি সমঝদার ড: মো: লিউনুস তোরভাহল্ডস – তিনি খুব প্রতিভাবান, নোবেল টোবেলও পাইতে পারেন বলে কানাঘুষা শোনা যায়। উনার আবার ব্যবসা বাণিজ্যে তেমন একটা খেয়াল নাই, মাঝেমাঝেই ফ্রি মিষ্টি বানিয়ে সবার মাঝে বিতরণ করেন।
আবার ধরি, কিছু সংখ্যক চোরাকারবারি বিলমদনের মাইক্রোমিষ্টি চোরাবাজারে বিক্রি করছে। যে মিষ্টি বিলমদনের দোকানে ৫০০০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়, সেটা শহরের ইস্টার্ণ চোরাইমার্কেটে ৫০ টাকাতেই কিনতে পাওয়া যায়।
আরো ধরি, আমি সামান্য এক মানুষ। বিলমদনের মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু অত টাকাও নেই যে সরাসরি দোকান থেকে অরিজিনাল মিষ্টি কিনে খাবো। তাই একদিন লোভে পড়ে কালোবাজার থেকে এক কেজি মিষ্টি কিনে নিলাম।
বাড়ি যাবার সময় রাস্তায় দেখি ড: লিউনুসও তার গনু/জিপিএল ব্র্যান্ডের মিষ্টি বিলাচ্ছেন সাধারণের মাঝে। আমি পেটুক মানুষ, না করতে পারলাম না। লিউনুসের দোকান থেকেও এক হাড়ি তুলে নিলাম।
যাকগে, বাসায় ফিরে মজা করে দুই হাড়ি থেকেই মিষ্টি খেলাম।
খেয়াল করলাম, ৫০০০ টাকার মিষ্টি যেটা আমি ৫০ টাকায় এনেছি, সেটা সেরা মানের ক্রিম, ঘি, দুধ দিয়ে বানানো। বাক্সটিও চকচকে, ফয়েলটয়েল রিবনফিবন কত কি লাগানো। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় আহ হা! হাজার হোক ৫০০০ টাকা দামের মিষ্টি (যদিও আমি ৫০ টাকায় দাও মেরেছি তাতে কি?)।
আবার, মাগনা পাওয়া লিউনুস সাহেবের গনু ফ্যাক্টরীর মিষ্টিও যথেষ্ট ভালোই। তবে এতে বিলমদনের মিষ্টির মত এত ছাম্মাকছাল্লু ধামাকাদার কিছু নাই। চাছাছোলা টাইপের বেসিক মিষ্টি, কোন এক্সট্রা ফ্লেভার নাই। মোড়োকটাও দেখতে একটু ম্যাড়মেড়ে। তবে, জিনিসটা ১০০% খাটি। লিউনুস সাহেব নিজের শ্রম দিয়ে গাটের পয়সা খরচ করে মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিলাচ্ছেন, খাটি হবারই কথা।
আমার প্রয়োজন ছিলো খালি পেট ভরার। সেটা বিলমদনের প্রিমিয়াম মিষ্টি এবং লিউনুসের ওপেন মিষ্টি দু’টোই মেটাতে পেরেছে ১০০%, কোন সন্দেহ নেই।
আবারও ধরি, বিকেলে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডায় গিয়ে দেখি বিলমদনের মিষ্টি আর লিউনুসের ফ্রী মিষ্টির সাপোর্টারদের মাঝে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। যারা বিলমদনের পক্ষে বলছে, তাদের অবস্থাও আমার মতই – তারা বেশিরভাগই আমার মত চোরবাজার থেকে ৫০ টাকায় মিষ্টি কিনে খায়।
একটু ফাপড়ে পড়ে গেলাম, দুই দোকানের মিষ্টিই আমার পছন্দ।
তো প্রশ্ন হলো, এখন আমার কি করা উচিত? চোরবাজার থেকে কেনা মিষ্টির গুণ গাইবো (হাজার হোক বিলমদনের মিষ্টি খেয়েছি), আর লিউনুস সাহেবের বিনামূল্যের মিষ্টির বদনাম করবো? নাকি অন্য কিছু করা উচিত?
সেখানে আপনি থাকলে কি করতেন? আপনার কাছেই প্রশ্ন রাখলাম… :D
এই লেখাটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ
এই লেখাটি পেয়েছিলাম প্রজন্ম ফোরামের ইনভার্বাস এর একটি কমেন্টে। লেখাটি যখন পড়েছিলাম, এতই পছন্দ হয়েছিল যে শেয়ার না করে থাকতে পারিনি। প্রথমবার যখন শেয়ার করি, তখন অবশ্য সরাসরি লিংক দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারিনি লিংকের অভাবে। আগে গুগল সার্চ দিয়ে ভালোভাবে কোন কিছু খুঁজেও পেতাম না। :p কোন লেখা পছন্দ হলে সেটা ডক ফাইলে কপি করে রাখতাম। পরে প্রয়োজন হলে শেয়ার করতাম। তাই তখনকার সময়ে সূত্র ইন্টারনেট দিয়েই চালিয়ে যেতে হতো।
আর আগে এসব কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যাপারগুলো খুব বেশি একটা বুঝতাম না। যখন নিজের কিছু লেখা চুরি গিয়েছে, তখনই অনুধাবণ করতে পেরেছি লেখার কৃতজ্ঞতা না দিলে একজন লেখকের কতখানি কষ্ট হয়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাই আমার এখানে লেখাটি পোস্ট করা থেকে নিজেকে থামাতে পারলাম না। :D